বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:২৭ পূর্বাহ্ন
ক্রাইমসিন ডেক্সঃ
কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ তিনদিনের জন্য সব কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণায় উত্তাপ ছড়িয়েছে গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’র (জিইউবি) শিক্ষার্থীদের মাঝে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি সেক্রেটারি, সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক মেম্বার আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। আর তার স্ত্রী সৈয়দা আরজুমান বানু নার্গিস এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি চেয়ারম্যান, সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক মেম্বার।
(১৫ আগস্ট) দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জানতে পেরে নগরের নথুল্লাবাদ শের ই বাংলা সড়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-১ সামনে বিক্ষোভ করে। শিক্ষার্থীরা জানান, ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন স্থানে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এ কে এম এনায়েত হোসেন সই করে একটি অফিস আদেশ ক্যাম্পাসে সাটিয়ে দেন। যেখানে অনিবার্য কারণ বসত ১৬ আগস্ট থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম স্থগিত থাকার কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে জানানো হয়। দুপুরের দিকে বিষয়টি জানতে পেরে শিক্ষার্থীদের সন্দেহ হয়।
তাৎক্ষণিক আশপাশের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসেন। কিন্তু ক্যাম্পাস তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, তালাবদ্ধ ক্যাম্পাসের ভেতরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আটকা পড়েছেন। তালা ভেঙে তাদের বের করে আনা হয়।
পরে কর্তৃপক্ষের কাউকে না পেয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী মো. হাসিবুল, মিতু আক্তার ও মাইনুল ইসলাম বলেন, কাউকে কিছু না জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভেতরে রেখে তালা মেরে চলে যান। আমরা এসে তাদের উদ্ধার করি। এখন আমরা জানতে চাই কেন এমনটা হলো? ভেতরে আটকে পড়া শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েই পিয়ন দিয়ে ছাত্র-ছাত্রী হয়রানি করা হয়।
পরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভেতরে রেখে তালা দিয়ে চলে যায় প্রশাসন। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম রাব্বি বলেন, শোনা যাচ্ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। আর যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এতগুলো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কি হবে? এটা বুঝতে পেরেই আমরা আন্দোলন শুরু করেছি, যদি প্রশাসনে থাকা নিয়ে কারও সমস্যা হয়, তবে সে পদত্যাগ করে নতুনদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো হোক।
বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে ভার্সিটির ক্লাস, পরীক্ষাসহ সকল কার্যক্রম চালু করা এবং ক্লাসরুম আধুনিকায়ন করাসহ ৮ দফা দাবি উপস্থাপন করে।
দাবিগুলো হল- অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার নেওয়ামুল হকের পদত্যাগ; ভার্সিটির চলাকালীন সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিকভাবে বন্দি করে রাখার সুষ্ঠু জবাব দেওয়া; ভার্সিটির আয়-ব্যয়ের সকল হিসাব ৬ মাস পরপর সবার সামনে প্রকাশ করা; ভার্সিটিতে সকল প্রকার লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা; সেমিস্টার ফি ও ওয়েভারে বৈষম্য দূর করাসহ শিক্ষার্থীদের সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান ঘটানো; আইন বিভাগে যোগ্য শিক্ষকদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা; ট্রেজারার ও রেজিস্ট্রার রুমে শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ করা।
এ দাবিগুলো অবিলম্বে মানা না হলে আন্দোলন আরও কঠোর হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম এনায়েত হোসেন বলেন, ইউজিসি থেকে এখনও ক্লাস চালুর নির্দেশ আমাদের দেওয়া হয়নি, দিলেই ক্লাশ কার্যক্রম শুরু হবে। তবে আজ শুধু আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ‘ল সোসাইটি’ নামে একটি অ্যাসোসিয়েশনের প্রোগ্রামের আয়োজন নিয়ে ক্যাম্পাসে আসে।
আমরা জানতে পারি ওখানে দুটি গ্রুপ রয়েছে, ঝামেলা হতে পারে তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ক্যাম্পাসের সকল কার্যক্রম স্থগিতের নোটিশ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের ৮ দফা দাবির বিষয়ে তিনি জানেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ওরা মৌখিকভাবে আমাকে বলেছে আমি লিখিত আকারে চেয়েছি।
কয়েকটি দাবি এ মুহূর্তেই সমাধান করা যাবে, বাকিগুলোয় সময় লাগবে। যেমন অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার নিজে পদত্যাগ করলে এখনই সম্ভব, আর তা না হলে আমরা তাকে বরখাস্ত করতে পারি, যেটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপাার। তবে শিক্ষার্থীদের সকল যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখা হবে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরও আশ্বস্ত করা হয়েছে।